শেরপুরের ‘সুলতান’ আসছে কোরবানির হাট কাঁপাতে। যার ওজন ৩৩ মণ। ফ্রিজিয়ান জাতের এ গরুকে সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করে কোরবানির উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে। ‘সুলতান’র দাম হাঁকা হচ্ছে সাড়ে ১৫ লাখ টাকা। গরুর মালিকের দাবি, উপজেলার এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় গরু এটি। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার কলসপাড় ইউনিয়নের বালুরঘাটা গ্রামের আকবর আলী তিন বছর ধরে ‘সুলতান’কে লালন পালন করেছেন।
সম্প্রতি আকবর আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির সামনে কয়েকজন মিলে ‘সুলতান’কে গোসল করাচ্ছেন। গায়ের রং কুচকুচে কালো। স্বাস্থ্যেও যেমন, দেখতেও তেমন। চললে ভাব তার সুলতানি। তাই আদর করে নাম রেখেছেন সুলতান। সুলতানকে যে দেখবে তারই চোখের নজর কেড়ে নেবে। এবারের ঈদে ফ্রিজিয়ান জাতের এ ষাঁড়টির দাম তিনি হাকিয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। এর ওজন ৩৩ মণ। আর বিশালাকার পশুটিকে দেখতে বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় সময়ই লোকজন আসছেন।
আকবর আলী জানায়, ‘সুলতান’ প্রতিদিন খড়, ঘাস বাদে অন্তত ১০ কেজি করে খৈল, ভুষি, ভাতের মাড়সহ অন্যান্য পশু খাদ্য খায়। বর্তমানে এর বয়স তিন বছর। এবার কোরবানির ঈদে ৩৩ মণ ওজনের সুলতানকে ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করার আশা।
তিনি আরও বলেন, বাড়ির সকলে মিলে অনেক আদর করে সন্তানের মত সুলতানকে লালনপালন করেছি। আমি একে মোটাতাজাকরণের জন্য কোনো প্রকাশ ওষুধ দেইনি। ডিজিটাল স্কেলের মাধ্যমে গরুটির ওজন পরিমাপ করেছি। স্কেলে ওজন ৩৩ মণ হয়েছে। আমি ১৫ লাখ টাকা দর চাচ্ছি।
আকবর আলির ছেলে তামজিদ বলেন, আমার আব্বা এই গরুটিকে ছোট থেকে অনেক যত্ন করে লালন পালন করতাছে। আমরাও সহযোগিতা করি। গরুটা সবার পছন্দের গরু। গরুটা জন্মের সময়ই আকারে অনেক বড় হইছে। কোনো ধরনের ক্ষতিকর ট্যাবলেট ও ইনজেকশন ছাড়াই সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে খড়, তাজা ঘাস, খৈল ও ভুসি খাইয়ে লালন-পালন করা হয়। পাশাপাশি নিয়মিত গোসল করানো, পরিষ্কার ঘরে রাখা ও রুটিন অনুযায়ী ভ্যাকসিন দেয়াসহ প্রতিনিয়ত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া হয়েছে।
নালিতাবাড়ী শহরের ছায়াগাছতলা হতে দেখতে এসেছেন শামসুল আলম। তিনি বলেন, এত বিশাল আকৃতির গরু সচরাচর চোখে পড়ে না। এত বড় গরু আমাদের এলাকায় প্রথম। যদি আকবর আলী নায্যদাম পায়, তাহলে আরও অন্যান্য প্রান্তিক খামারি এমন গরু পালনে উদ্ধুদ্ধ হবে।
একই কথা জানান শেরপুর শহর হতে আসা আলী আজম। তিনি বলেন, আমার দেখাতে দেশীয় খাবার খাওয়ানো এই গরুটা অনেক বড় হয়েছে। বর্তমান বাজারে গো খাদ্যের দাম বেশ চড়া। যদি আকবর আলী নায্য দাম পায় তাহলে আমরা খুশি। আমার প্রত্যাশা, সৌখিন ও সামর্থ্যবান মুসলমান ভাইয়েরা এমন প্রান্তিক খামারির গরু কিনে তাদের পাশে দাঁড়ান। এক্ষেত্রে প্রাণী সম্পদ বিভাগের বড় গরুর জন্য প্রচারণা সেল করা দরকার।
জেলা প্রাণিসম্পদ সূত্রে জানা যায়, জেলার ৫টি উপজেলার ছোট বড় প্রায় ১৩ হাজার ৭৩১ জন খামারি রয়েছেন। এ ছাড়াও অনেক পরিবার ব্যক্তিগতভাবে গরু, মহিষ ও ছাগল পালনের সঙ্গে জড়িত। এবার কোরবানির জন্য শেরপুর জেলায় ৫১ হাজার ২২৫টি পশুর চাহিদা থাকলেও প্রস্তুত হয়েছে ৮৩ হাজার ৮০২টি পশু। যা চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩২ হাজার বেশি। পশুগুলো হলো- ৪০হাজার ২৭০টি ষাঁড়, ২হাজার ৮৬৫টি বলদ, ১৩হাজার ৭৯৪টি গাভি, ১হাজার ৩৮৬টি মহিষ, ২২হাজার ৩৯টি ছাগল, ৩হাজার ৪৪৮টি ভেড়া। প্রস্তুত করা এসব পশু নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে হাট বাজারগুলোতে বিক্রি হবে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার ডা. রেজওয়ানুল হক ভূঁইয়া ঢাকা মেইলকে জানান, কোরবানির পশুকে অসদুপায়ে মোটাতাজা না করার জন্য আমরা বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করেছি। আমরা খামারিদের প্রস্তুত করা পশুকে স্টেরয়েড হরমোন ও কেমিক্যাল না খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছি। গবাদিপশুকে পোলট্রি ফিড বা বয়লার ফিড খাওয়ানো যাবে না। গরুর পরিচর্যায় পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন ভেটেরিনারি ফার্মেসিতে নিম্নমানের ওষুধসামগ্রী না রাখার বিষয়ে তদারকি করা হচ্ছে। তবে কয়েক দফায় গোখাদ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে খামারিদের।