বর্তমান সময়ে মানুষের যোগাযোগের অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়া। আর সেই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে ব্যাতীক্রমী এক উদ্যোগে শেরপুর জেলার জানা অজানা সকল বিষয় গুলো নিয়ে তথ্যবহুল ভিডিও বানিয়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন প্রতিভাবান ‘Thought of Billal’ পেইজ এর ক্রিয়েটর বিল্লাল হোসেন।
বিল্লাল হোসেন, জন্ম ১৯৯৭ সালের ১৪ অক্টোবর। শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার ‘মাটি অফিস’ সংলগ্ন ‘হুজুরীকান্দা’ গ্রামে তার বেড়ে উঠা। তার পিতার নাম মরহুম আবুল কালাম ও মাতার নাম মজিদা খাতুন।
শৈশব ও কৈশোর জীবনের পুরো সময়টাই গ্রামের আলো বাতাসে কেটেছে তার। এইচএসসি পাশ করেছেন চন্দ্রকোনা ডিগ্রি কলেজ থেকে।
এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে গণিত বিষয়ে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলেন ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে। আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও বৃদ্ধ বাবার জন্য সন্তান হিসেবে দায়িত্ববোধের জটিল সমীকরণে স্নাতক পাশ করে গণিত শিক্ষক হওয়ার যে অংকটা কষেছিলো সে অংকটা আর মেলে নাই।
তবে থেমে নেই বিল্লাল হোসেন। নিজরের দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলো ব্যতিক্রমভাবে। মেধা ও প্রতিভার প্রতিফলনে সম্প্রতি তার শিক্ষণীয় ভিডিও গুলো ছড়িয়ে যাচ্ছে শেরপুরের বিভিন্ন জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপে। যুগোপযোগী শিক্ষা বেকারত্ব থেকে বেরিয়ে আসার সঠিক পদক্ষেপ, তৃণমূলের তরুণদের ক্যারিয়ার গঠনে সঠিক গাইডলাইনসহ দেশ ও জনসেবা মূলক কাজ করাই তাহার প্রতিপাদ্য বিষয়।
জানা যায়, তার ভিডিওগুলো লাখো দর্শকের নজর কেড়েছে। বেশ কিছু ভিডিওতে কোটি দর্শকের সাড়াও মেলেছে। তার ভিডিওগুলোর মাধ্যমে দেশের নানান প্রান্তের শুভাকাঙ্ক্ষী সহ লক্ষাধিক অনুসারীর সাড়া ও ভালোবাসা পেয়েছেন। প্রশংসা পেয়েছে দেশের সুনামধন্য, সুশীল ব্যক্তিত্বসহ সর্বমহলের।
এবিষয়ে প্রতিভাবান বিল্লাল হোসেন এর উঠে আসার ইতিহাস ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন: বয়স তখন ২১, একটা চাকরির জন্য পরিচিত মানুষদের কাছে বারংবার অনুরোধ। ২টা সার্টিফিকেট ছাড়া অভিজ্ঞতার ঝুড়িতে কিছু ছিলো না। নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম, প্রচুর সময় দিলাম। দিনশেষে যা বুঝলাম, “সার্টিফিকেট অর্জনের পাশাপাশি দক্ষতা অর্জন করতে না পারলে বেকারত্বের কারাগার থেকে জামিন পাওয়া দুষ্কর”। একজন ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হলো।
উনি তখন রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৭০ কোটি টাকার একটা প্রজেক্টের দায়িত্বে ছিলেন। আমি জানি, হয়তো তার কাছে খুব ভালো মানের চাকরি আছে কিন্তু এটাও জানি আমি কোনোটার জন্যেই তৈরি না। তাই আমি চাকরি চাইনি, আমি বলেছিলাম, আমি কর্মজীবনে যেতে চাই, আপনি আমাকে যতটুকু চিনেন সেটার উপর ভিত্তি করে বলেন, আমাকে দিয়ে কি হবে!.? সে বলেছিলো, তোমার যতটুকু যোগ্যতা আছে, হোটেল ইন্ডাস্ট্রিতে চেষ্টা করে দেখতে পারো, হয়তো ভালো করতে পারবে। তার একটা পরামর্শ আমার লাইফের টার্নিং পয়েন্ট ছিল।
হোটেল ম্যানেজমেন্টের বেসিক কোর্স করলাম “ইউসেফ বাংলাদেশ” থেকে। তারপর “আই.এইচ.এম.এইচ থেকে হোটেল ম্যানেজম্যান্টে আর.পি.এল লেভেল-১ কম্পিট করি। ইন্টার্ন শেষ করলাম দেশের সর্ববৃহৎ ৫ তারকা হোটেল রয়েল টিউলিপ সী পার্ল থেকে (২০২২ সালে এই হোটেলটি বিশ্বের সেরা সী সাইড হোটেল হিসেবে এওয়ার্ড পেয়েছে) । ট্রেনিং এ ছিলাম ২২ জন। মাত্র ২জন চাকরিতে যোগদানের সুযোগ পেয়েছিলাম, তার মধ্যে আমি একজন।
আসলে, পারফরমেন্স মোটামুটি ছিল কিন্তু নিজের উপর যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস ছিল। একজনেরও যদি চাকরি হয়, সেটা আমার হবে। সাহস ও প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকলে এগিয়ে যাওয়ার পথে কোনো বাধায় কাউকে দমিয়ে রাখতে পারবে না।
নিজেকে একজন ক্লিন ইমেজের সমাজকর্মী হিসেবে গঠণ করতে চাই। সামাজিক বিশৃঙ্খলা মুক্ত, মূল্যবোধের অবক্ষয়রোধ, বেকারত্ব নিরসনের জন্য আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। প্রচুর মানুষের সহযোগিতা ও ভালোবাসা পেয়েছি। মানুষের জন্য কিছু করার প্রয়াস ছিলো, আছে, থাকবে। বিশেষ করে, তৃণমূল তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ক্যারিয়ার নিয়ে সাপোর্ট দিচ্ছি।
দেশ, সমাজ ও মানুষ নিয়ে আমি আমার চিন্তাভাবনা পরিকল্পনাগুলো কন্টেন্ট আকারে আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে আপলোড করে থাকি। পেইজের নাম : Thoughts of Billal.
এছাড়াও তিনি জানায়, জন্মভূমি নকলা উপজেলাসহ শেরপুর জেলা কে দেশব্যাপী তুলে ধরার জন্য কাজ করতে চান তিনি। এ ব্যাপারে স্থানীয় গণ্যমান্যব্যক্তিবর্গ সহ সকলের সমর্থন চান তিনি। সকলের পরামর্শ নিয়ে আরও অনেকদূর যেতে চান তিনি।বিশ্বজুড়ে তুলে ধরতে চান নিজ জেলার প্রতিচ্ছবি।
জানা যায়, সম্প্রতি তিনি ভিডিও প্রকাশ ছাড়াও একটি বইও লিখেছেন। যার নাম “হৃদয় ভাঙ্গার গর্জন”। ইতিমধ্যে বইটি সাড়া দেশে আলোচনায় রয়েছে। তার লেখাগুলোর প্রশংসাও অপরিসীম। এরকম মেধার প্রতিফলনে বিভিন্ন বই প্রকাশ এর জন্য পাঠক ও দর্শকদের প্রত্যাশার তাগিদও পেয়েছেন তিনি।
এবিষয়ে তার এলাকাবাসীর মতামত নিয়ে জানা যায়, বিল্লাল একজন পরিশ্রমী, কর্মঠ ও মেধাবী ছেলে। এলাকায় তার কোনো নেতিবাচক দিক নেই, সবার পছন্দের মানুষ তিনি।
তাছাড়া তার কর্মরত প্রতিষ্ঠান হোটেল রয়েল টিউলিপ সী পার্ল এর স্টাফদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিল্লাল ব্যতিক্রমী একজন মানুষ। বিল্লাল তার ভিডিওগুলোর মাধ্যমে তার জন্মস্থান শেরপুর জেলা সহ তার কর্মস্থল হোটেল রয়েল টিউলিপ সী পার্ল এর সুনাম বৃদ্ধি করেছে। তার ভবিষ্যৎ সফলতা কামনা করেছেন অত্র প্রতিষ্ঠানের স্টাফবৃন্দ ।
এ বিষয়ে বিল্লাল এর পরিবার জানায়, বিল্লাল আমাদের গর্বিত সন্তান। সে ছোট থেকেই পরিবারের আর্থিক সমস্যা দূর করার জন্য নিজের অনেক ইচ্ছে ত্যাগ দিয়েছে। পরিবারের জন্য তার অবদান অপরিসীম।
সর্বোপরি নকলাসহ দেশবাসীর দোয়া, সমর্থন ও ভালোবাসা কামনা করেছেন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বিল্লাল হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যবৃন্দ ।
Related