রাত পোহালেই (শনিবার) ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম ও শেষ দফার ভোট। এদিন ভোটগ্রহণ হবে দেশটির আটটি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের ৫৭ টি লোকসভা আসনে। এর মাধ্যমে ভারতের ৫৪৩টি লোকসভা আসনে ভোট নেওয়া সম্পন্ন হবে।
এ দফায় মোট ভোটারের সংখ্যা প্রায় ১০ কোটি ৬ লাখ। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫.২৪ কোটি, নারী ভোটার ৪.৮২ কোটি। আর তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন তিন হাজার ৫৭৪ জন। এতে ভোটগ্রহণ হবে ইভিএমে। ভোটদানের জন্য এ দফায় গোটা দেশজুড়ে ১.০৯ লাখ ভোটগ্রহণ কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের তরফেও একাধিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণ শুরু হবে সকাল ৭ টায়, জা চলবে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত।
শেষ দফায় ভোটগ্রহণ হবে উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবে ১৩ টি করে আসন, পশ্চিমবঙ্গে ৯টি, বিহারে ৮ টি, ওড়িশায় ছয়টি, হিমাচল প্রদেশে চারটি, ঝাড়খন্ডে তিনটি এবং চন্ডিগড়ে একটি আসনে। এ দফায় দেশ জুড়ে ৯০৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হবে। এর মধ্যে অন্যতম বিজেপির শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তৃতীয়বারের জন্য সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্যে উত্তরপ্রদেশের বারাণসী কেন্দ্র থেকে প্রার্থী হয়েছেন মোদি। এই কেন্দ্রে তার প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসের অজয় রাই।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজেপি প্রার্থী অনুরাগ ঠাকুর (হামিরপুর), রবি শংকর প্রসাদ (পাটনা সাহিব), বিজেপি প্রার্থী ভোজপুরি অভিনেতা রবি কিষান (গোরখপুর), বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালপ্রসাদ যাদবের কন্যা আরজেডি প্রার্থী মিসা ভারতী (পাটলিপুত্র), সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা (কাংড়া), বিজেপি প্রার্থী অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত (মান্ডি), তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও মমতা ব্যানার্জির ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জি (ডায়মন্ড হারবার), টলিউড অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ (যাদবপুর), বিজেপির রেখা পাত্র (সন্দেশখালি), শিরোমণি আকালি দলের প্রার্থী হরসিমরাত কৌর বাদল (ভাতিণ্ডা)।
এদিকে শেষ দফায় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণবঙ্গের নয়টি লোকসভা আসনের দিকেও নজর থাকবে। ভোটগ্রহণ হবে দমদম, বারাসাত, বসিরহাট, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ড হারবার, যাদবপুর, কলকাতা উত্তর ও কলকাতা দক্ষিণ। দমদম কেন্দ্রে বর্তমান সাংসদ ও তৃণমূলের প্রার্থী সৌগত রায়, বিজেপির প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত এবং বামেদের প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী। বারাসাত কেন্দ্রে তিনবারের জয়ী সাংসদ তৃণমূলের প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার, বিজেপির প্রার্থী স্বপন মজুমদার, বামেদের প্রার্থী সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, আইএসএফের প্রার্থী তাপস ব্যানার্জি।
সংখ্যালঘু অধ্যুষিত বসিরহাট কেন্দ্রের বর্তমান সংসদ সদস্য নুসরাত জাহানকে এবার প্রার্থী করেনি তৃণমূল, তার বদলে দলের প্রার্থী হাজী নুরুল ইসলাম। বিজেপির প্রার্থী রেখা পাত্র, সিপিআইএম প্রার্থী নিরাপদ সরদার। সম্প্রতি এই কেন্দ্রের সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর অত্যাচার, ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশ। সেই ঘটনার প্রতিবাদী মুখ রেখাকে প্রার্থী করার পর তার সাথে ফোন কথা বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবে নজর থাকবে এই কেন্দ্রের দিকেও।
জয়নগর কেন্দ্রের তৃণমূলের প্রার্থী সাংসদ প্রতিমা মন্ডল, আরএসপি প্রার্থী সমরেন্দ্র নাথ মন্ডল, বিজেপির অশোক কান্ডারী। মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী বাপি হালদার, সিপিআইএম প্রার্থী শরৎচন্দ্র হালদার, বিজেপির প্রার্থী অশোক পুকাইত। ডায়মন্ড হারবার তৃণমূলের প্রার্থী মমতার ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জি, এই কেন্দ্রে তার প্রধান প্রতিপক্ষ সিপিআইএমের প্রতীকুর রহমান, বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাস। যাদবপুর বর্তমান সংসদ অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীকে এবার প্রার্থী করেনি তৃণমূল। তার বদলে প্রার্থী করা হয়েছে আরেক অভিনেত্রী সায়নী ঘোষকে। তার প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির অনির্বাণ গাঙ্গুলী সিপিআইএমের সৃজন ভট্টাচার্য।
কলকাতা উত্তর তৃণমূলের প্রার্থী তিনবারের বিজয়ী সংসদ সদস্য সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপির প্রার্থী তাপস রায়, কংগ্রেসের প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্য। কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রের বর্তমান সাংসদ মালা রায়কে প্রার্থী করেছে তৃণমূল, এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী, সিপিআইএম প্রার্থী সায়রা শা হালিম।
গত ২০১৯ সালের নির্বাচনে এই নয়টি আসনেই জয় পেয়েছিল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে চলমান নির্বাচনে দক্ষিণবঙ্গে অনেকটাই শক্তিশালী হয়েছে বিজেপি, পাশাপাশি শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে বামেদেরও। সেক্ষেত্রে প্রত্যেকটি আসনেই জয় ধরে রাখা তৃণমূলের কাছে শক্ত চ্যালেঞ্জ। শেষ দফায় পশ্চিমবঙ্গে মোট ভোটারের সংখ্যা ১ কোটি ৬৩ লাখের মতো। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৩.১৯ লাখ, নারী ভোটার ৮০.২০ লাখ, তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৫৩৮ জন।
এই নির্বাচনে ৪০০ আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা রেখেছিল এনডিএ জোট, এর মধ্যে এককভাবে ৩৭০ আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল বিজেপির। অন্যদিকে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা থেকে রাজনৈতিকভাবে এনডিএ জোটকে পরাজিত করা। সেক্ষেত্রে টানা তৃতীয়বারের জন্য মোদি সরকার ক্ষমতায় আসবে কিনা, নাকি দিল্লি মসনদে বসবে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের কোন নেতা- সেটাই এখন দেখার বিষয়। আগামী ৪ জুন ভোট গণনার দিনই তা পরিষ্কার হবে। এদিকে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আধঘণ্টা পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে শুরু হবে এক্সিট পোল (বুথ ফেরত জরিপ)।